fbpx

মা ও দুই মেয়ের মৃত্যুর কারণ

আজ মঙ্গলবার লাশগুলোর ময়নাতদন্ত শেষে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা এ কথা জানান। 

ঢাকার মিরপুরের পাইকপাড়ায় মা জেসমিন আক্তার ও তাঁর দুই মেয়ে হাসিবা তাহসিন হিমি (৮) ও আদিবা তাহসিন হানির (৪) মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হয়েছে।

সকালে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে জেসমিন ও তাঁর দুই মেয়ে লাশের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। তদন্তের সময় এই তিনজনের ভিসেরা নমুনাও সংরক্ষণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিকদের সেলিম রেজা বলেন, আঘাতের আগে তাঁদের কোনো ধরনের বিষ বা এ–জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না, এ জন্য তাঁদের ভিসেরা নমুনাও সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আঘাতের কারণে জেসমিন আক্তার ও তাঁর দুই মেয়ে হিমি ও হানির শরীরে জখম ছিল। এই জখমের কারণে রক্তক্ষরণে তাঁরা মারা যান।তবে জেসমিন তাঁর দুই মেয়েকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ ধারণা করছে। এরপরও একজন মা এভাবে নিজেদের সন্তানদের হত্যা করতে পারেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশের দারুস সালাম জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছু মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। জেসমিনের শোয়ার ঘর থেকে রক্তাক্ত ছুরি ও অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ বলা যাবে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হবে।নিহত জেসমিন আক্তার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার ছিলেন। তাঁর স্বামী হাসিবুল ইসলাম সংসদ সচিবালয়ের সহকারী লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান। মিরপুর বাঙলা কলেজসংলগ্ন কলোনির ১৩৪ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে এই দম্পতি আত্মীয়স্বজন নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জেসমিনের শোয়ার ঘর থেকে দুই মেয়েসহ তাঁর লাশ উদ্ধার হয়।নিহত ব্যক্তিদের স্বজন, প্রতিবেশী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বেলা দুইটার দিকে অফিস থেকে ফিরে নিজের কক্ষে দুই মেয়েকে খাটে বসিয়ে ভাত খাওয়ান জেসমিন। এরপর নিজে না খেয়েই তাদের নিয়ে দরজা আটকে শুয়ে পড়েন।

ভেতরে টিভিও চলছিল। জেসমিনের মাইগ্রেনের ব্যথা আছে বলে তিনি শুয়ে পড়লে পরিবারের কেউ তাঁকে জাগান না। এ সময় জেসমিনের এক খালাতো বোন রেহানা বেগম, স্বামীর ভাগনে রওশন জামিল ও তাঁর স্ত্রী রোমানা পারভীন বাসাতেই ছিলেন। জেসমিনের ভাই শাহীনুল ইসলাম বাইরে ছিলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে জেসমিনের স্বামী হাসিবুল বাসায় ফেরেন।

স্ত্রী ও দুই মেয়ে ঘুমাচ্ছে ভেবে তিনি তাঁদের না জাগিয়েই নামাজ আদায়ে চলে যান। সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেসমিনের ভাই শাহীনুল বাসায় ফিরে দরজায় শব্দ করেও বোন ও ভাগনিদের সাড়া না পেয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে কাচের ফাঁক দিয়ে রক্ত দেখতে পান। এরপর তিনি দরজা ভেঙে তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন।

প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে জড়ো হন। এর মধ্যে হাসিবুলও বাইরে থেকে বাসায় ফেরেন।পারিবারিক সূত্র উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যখন এ ঘটনা যখন, ঘটে তখন বাড়িতে অনেকে ছিল। তাঁরা জানিয়েছেন জেসমিনের মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। জেসমিন এর আগেও বেশ কিছু ঘুমের বড়ি খেয়েছিলেন।

এমনকি কয়েক দিন আগে এক মেয়েকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর আরেক মেয়েকে খাওয়াতে গেলে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টি ধরে ফেলে। তাঁদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। জেসমিনকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।গত বছর জেসমিনের মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এর পর থেকেই জেসমিন শুধু বলতেন, তিনি মারা গেলে তার সন্তানদের কে দেখবে। সব সময় বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতেন। চাকরি করে বাচ্চাদের যত্ন নিতে সমস্যা হচ্ছে বলে অন্যদের জানাতেন। সব স্বজনই তাঁকে চাকরি ছাড়ার কথা বলতেন, কিন্তু তিনি নিজেই আবার আরও কিছুদিন চাকরি করার কথা বলতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *