fbpx

চৌদ্দগ্রামে খুনের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা!

সোহাগ মিয়াজিঃ- কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে জমি জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়ন খেয়াইশ পশ্চিম পাড়ায় মৃত হাসমত আলীর পুত্র মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই ঘটনায় আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়। দেলোয়ার হোসেনের মাতা হাসন বানু বাদী হয়ে ৫জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন আবুল হাসেমের ছেলে আজিজুর রহমান, হাসমত আলীর ছেলে আবুল হাসেম, হনুফা বিবি, কোহিনুর আক্তার, মোঃ সফিক। অপরদিকে তার স্ত্রীর সানজিদা আক্তারের অভিযোগ তিন ভাই মিলে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আপন ভাই মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে (৩৫ ) হত্যা করে । এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় নিহত মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর স্ত্রী সানজিদা আক্তার ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চৌদ্দগ্রাম থানার পুলিশ তাদের মধ্যে দেলোয়ারের এক ভাই হারুনুর রশিদ (৪৫) এবং হারুনের স্ত্রী নাসিমা আক্তারকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে ।

অন্য দুই ভাই পলাতক রয়েছে। নিহত দেলোয়ার হোসেন খেঁয়াইশ গ্রামের প্রয়াত হাসমত আলীর ছেলে । মৃত দেলোয়ার হোসেনের মা হাসন বানু ও তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার ২জনের রয়েছে ভিন্ন অভিযোগ। তার স্ত্রী সানজিদা জানায়, দেলোয়ার হোসেন এর তিন শতক জমি বিক্রি করার প্রস্তাব দিলে হারুনুর রশিদ এলাকার লোকজনকে স্বাক্ষী রেখে দেলোয়ারের কাছ থেকে তিনশতক জমি ছয় লক্ষ টাকা দিয়ে খরিদ করে । ছয় লক্ষ টাকার মধ্যে তিন লক্ষ টাকা নগদ দেলোয়ারকে দেয় । বাকি তিন লক্ষ টাকা দুই মাস পর দেওয়ার কথা ছিল। দুই মাস পর দেলোয়ার হারুনের কাছে টাকা চাইলে, হারুন দেলোয়ারকে খারাপ আচরন করে ।

হারুন তার তিন লক্ষ টাকা ফেরত চায়। অবশেষে দেলোয়ার হারুনের তিন লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে দেয় । কিছু দিন পর দেলোয়ার তার চাচা মোঃ আবূল হাশেম এর কাছে জমি বিক্রি করে । এই জমি বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে, জমিজমার ভাগ নিয়ে ভাইদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এর মধ্যে হারুনুর রশিদ, জাফর আহম্মেদ ও জাকির হোসেন একদিকে , অন্যদিকে দেলোয়ার হোসেন । এক র্পযায়ে ঝগড়া করতে করতে দেলোয়ারকে তিন ভাই মিলে লাঠিপেটা করেন এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করার পরও ক্ষিপ্ত হয়ে বড় একটি ছেনি নিয়ে এসে দেলোয়ারের উপর আক্রমন করে। তার মা হাসন বানু জানান, ঘটনার দিন তাদের সম্পদ ভাগাভাগির দিন ধ্যার্য্য ছিল। তার বড় ছেলে মোঃ হারুনুর রশিদ ও তার ৩য় ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেন ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে সম্পদ পরিমাপের সময় কথা কাটাকাটি হলে আবুল হাসেমের ছেলে ১নং আসামী আজিজুর রহমান বাদীর বড় ছেলে হারুনুর রশিদকে লক্ষ্য করে কোপ দিলে হারুনুর রশিদ দ্রুত সরে যায় এবং কোপ পড়ে তার ভাই দেলোয়ার হোসেনের উপর। দেলোয়ারের মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং প্রচুর রক্ষপাত হতে শুরু করে।

৪নং বিবাদী দেলোয়ার হোসেনকে ধারালো দা দিয়ে কোপ দিলে তার মাথার বাম পাশে কোপ পড়ে এবং ২নং বিবাদী আবুল হাসেম ছোড়া দিয়ে উপুর্যপুরি ঘাই দেয়। এতে তার প্রচুর রক্ষপাত হয়। এমতবস্থায় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় দেলোয়ারকে কুমেক হাসপাতালে আনা হয়। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এলাকাবাসী জানান, এই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলাতে সাধারন কোন নাগরিক যাতে হয়রানি না হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কিছু লোকজন জানান, মৃত দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলেন। তিনি গ্রামে থাকেন না। তিনি ব্যক্তিগত আক্রোশে হয়তো তার ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

অন্যদিকে মৃত দেলোয়ার হোসেনের মাতা হাসন বানু জানান, আবুল হাসেম ও তার ছেলে আজিজগং আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। নিজেদের বাঁচানোর জন্য আমার ছেলের স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে ঢাকা থেকে এনে আমার অপর ছেলেদের বিরুদ্ধে তড়িগড়ি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় জি.আর ৪৪১/১৭ হত্যা মামলা দায়ের করে। আমার ছেলেরা এই হত্যার সাথে জড়িত নহে। একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, সরবত উল্লাহ মুহুরী, ইউনুছ মিয়া, আব্দুর করিম মেম্বার, আব্দুর রশিদ, বজলু মেম্বারের সাথে কথা বললে তারা জানান, সম্পদের জন্য মানুষকে মেরে ফেলা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ। দেলোয়ারের খুনিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা কামনা করি। তবে পাল্টাপাল্টি যে মামলা দায়ের হয়েছে এতে প্রকৃত আসামী আইনের আওতায় আনতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। আমরা চাই মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হোক। প্রকৃত আসামীদের শাস্তি হোক। কোন নিরপরাধকে যাতে হয়রানি শিকার হতে না হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবুল ফয়সাল জানান, পাঁচ আসামির মধ্যে দুই জন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি তিনজনকে গ্রে প্তারের চেষ্টা চলছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *