fbpx

কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজ হসপিটালে অনিয়ম ভোগান্তিতে রোগী

মোঃ মহসিন হোসাইনঃ অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে বাধ্য হয়ে কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নিতে এসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন রোগীরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসক, ওষুধ ও সেবিকার সঠিক সেবা না পাওয়াও নিত্যদিনের ব্যাপার।
সরেজমিনে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, সমাজের দরিদ্র মানুষগুলো অর্থ সংকটে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে না পেরে বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে প্রবেশ করলেই দুর্গন্ধে নাকে রুমাল বাধতে হয়। নামমাত্র ঝাড়ু দেওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা পড়ে আছে হাসপাতালের এখানে-সেখানে। পানি দিয়ে না ধোয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাতপাতাল হলেও সে অনুযায়ী জনবল নেই, তার ওপর বাড়তি রোগীর চাপ রয়েছে সরকারি এ হাসপাতালটিতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের কথা বললেও রোগীরা বলছেন উল্টোটা।নির্ধারিত শয্যার চেয়েও অধিক রোগী ভর্তি সেখানে।যার কারনে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে কাটাতে হচ্ছে দিন।

চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলা এক রোগী জানান- তলপেটে ব্যথা নিয়ে গত ১৮-০৭-১৮ ইং বুধবার হসপিটালে ডাঃ বাপ্পীর তত্ত্বাবধানে ভর্তি হয়েছি কিন্তু গত তিন দিনে এক বারও তার সন্ধান মিলেনি। সমস্যা মনে করলে সঠিক সময়ে নার্স ডেকে পাওয়া যায় না। যাও বা আসেন, রুক্ষ আচরণ তাদের।

হসপিটালের বিভিন্ন রোগীরা জানান- হাসপাতালের বাথরুম অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন। নিতান্ত দায় থেকে এটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। খাবার পানির কোনো সুব্যবস্থা নেই। তবে ফরিদপুর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো থাকায় এখানে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই।
এতো বড় হাসপাতালটিতে একটি মাত্র অপারেশন থিয়েটার। যা একবারেই অপ্রতুল। অপারেশনের সিরিয়াল পেতেও দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের।
হাসপাতালে চিকিৎসকদের সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অফিস করার কথা থাকলেও প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার কারণে অধিকাংশ চিকিৎসক দুপুর ১টার আগেই হাসপাতাল থেকে চলে যান।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারেও রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। দীর্ঘ সময় সিরিয়াল দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। পুরোনো মেশিনপত্র হওয়ায় তার প্রতি আস্থা পাওয়া যায় না। তাই অধিকাংশ রোগী আশেপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করান।
এছাড়া অফিস চলাকালে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের (এমআর) ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার নিয়ম না থাকলেও সারা দিনই তাদের দৌরাত্ম্যে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন রোগীরা।
কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি আইন উপেক্ষা করে তারা হাসপাতালে অফিস সময়ে ডাক্তারদের চেম্বারে ভিড় করছেন। তাদের দাপটে ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা।
এছাড়া সকালে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা নারী ও শিশুদের প্রতিদিনই লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট নিতে হচ্ছে।এতে বিভিন্ন উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে ভোগান্তির শিকার হয়। বেলা সোয়া ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টিকিট কাউন্টারে প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সেখানে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে মায়েরা টিকিট কাটতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছিলেন।
এদিকে বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার কথা থাকলেও নামমাত্র কিছু ওষুধ নিয়েই বিদায় হতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের ওষুধ বিতরণ বিভাগে গিয়ে তালিকায় এন্টিবায়টিকসহ বিভিন্ন ওষুধের নাম লেখা দেখা গেছে। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ, তাদের দেওয়া হচ্ছে প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন ও এন্টাসিডসহ কম দামের কয়েকটি ওষুধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *