fbpx

একজন মহেন্দ্র সিং ধোনি

মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী


পুরো নাম

মহেন্দ্র সিং ধোনি/Mahendra Singh Dhoni

ডাকনাম

মাহি, এমএস ও ক্যাপ্টেন কুল

জন্ম

৭ই জুলাই ১৯৮১ রাঁচি, ঝাড়খণ্ড

অভিভাবক

পান সিং (বাবা)
দেবকী সিং (মা)

দাম্পত্য সঙ্গী

সাক্ষী সিং রাওয়াত (৪ই জুলাই, ২০১০)

পেশা

উইকেট-রক্ষক, ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটসম্যান

জাতীয়তা

ভারতীয়

ধর্ম

হিন্দু

ওডিআই অভিষেক

২৩শে ডিসেম্বর ২০০৪ বনাম বাংলাদেশ

টেস্ট অভিষেক

২রা ডিসেম্বর ২০০৫ বনাম শ্রীলঙ্কা

জার্সি নাম্বার

৭ (সাত)

রেকর্ড

২০১১ বিশ্বকাপ জয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক স্টাম্পিং, ২০০৭ সালে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়

ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার তথা ক্যাপ্টেন যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই হচ্ছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি | তাঁর ক্রিকেট প্রতিভার কথা ভারত তথা বিশ্বের সকল মানুষই জানেন | রাঁচির এক অল্প পরিচিত অঞ্চলের ছেলে যে ভবিষ্যতে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করবে সেটা অনেকে হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি |

এমন কোনো ক্রিকেটীয় সন্মান নেই যা তার ঝুলিতে নেই, সেটা বিশ্বকাপ জয়ই হোক কিংবা আই.পি.এলে জয় | প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই তিনি উড়িয়েছেন তার বিজয় পতাকা | সেইজন্যই তো, তিনি হচ্ছেন ভারতের সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম অধিনায়ক |

Early Life of MS Dhoni:

মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্ম হয় ৭ই জুলাই ১৯৮১ সালে, বর্তমান ঝাড়খন্ড অঞ্চলের রাঁচি শহরে | তার বাবার নাম হলো পান সিং এবং মায়ের নাম দেবকী সিং | তাঁর বাবার আসল বাড়ি ছিলো উত্তরাখন্ডের আলমোড়া জেলার লাওলি গ্রামে কিন্তু যখন তিনি রাঁচিতে মেকন লিমিটেডে জুনিয়র ম্যানেজারের পদে চাকরি পান, তখন তিনি তার পরিবারকে নিয়ে সেখানে চলে আসেন এবং বসবাস করতে শুরু করেন |

তাদের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ছিলো ৫জন | বড় দাদা নরেন্দ্র সিং এবং দিদি জয়ন্তী দেবীই ছিলেন তাঁর ছোটবেলার খেলার সঙ্গী |

তুমি কি এটা জানো, ধোনি কেন আগে বড় চুল রাখতেন? আশা করি তুমি তাকে বড় এবং লম্বা চুলেই খেলতে দেখেছো অনেক আগে কিন্তু এর পিছনের কারণ হয়তো এখনো জানোনা |

তাহলে জেনে রাখো !

মহেন্দ্র সিং ধোনির বড় এবং লম্বা চুল রাখার পিছনে বলিউড তারকা জন আব্রাহামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কারণ তিনিও আগে লম্বা চুলই রাখতেন যেটা তুমি আশা করি নিশ্চই তার “ধুম” সিনামাতে লক্ষ্য করেছ | আর ধোনির সেইসময়ের পছন্দের বলিউড তারকাদের মধ্যে যেহেতু জন আব্রাহাম সবচেয়ে ফেভারিট তারকা ছিলেন, তাই তাকেই অনুকরণ করে তিনি লম্বা চুল রাখা শুরু করেন এবং বাইক চালানোও শুরু করেন |

তার বাড়ির গ্যারেজে চারটি গাড়ি ও ২৩টি উচ্চ গতির মোটরসাইকেল আছে বলে অনেকের মুখে শোনা যায় |

Education Life of MS Dhoni:

মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ডিএভি জহর বিদ্যা মন্দির থেকে | সেখানেই তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করা শুরু করেন এবং স্কুলের ফুটবল একাডেমিতে যোগ দেন আর সেখানে একজন গোলরক্ষক হিসাবে খেলতে থাকেন |

তুমি হয়তো জেনে অবাক হবে যে, তিনি কিন্তু ফুটবল জেলা এবং ক্লাবপর্যায়ের হয়েও খেলেছিলেন | কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি তার সেই ফুটবল খেলাকে বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি, কারণ তাঁর ফুটবল কোচ তাকে ফুটবল খেলা অপেক্ষা ক্রিকেট খেলা খেলানোর প্রতি বেশি অনুপ্রাণিত করা শুরু করেন |

Mahi’s Batting Against South Africa

কথাটা হাস্যকর লাগলেও, এটাই সত্যি | হয়তো তিনি সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন, তার প্রিয় ছাত্র মাহির মধ্যে দুর্দান্তু ক্রিকেট প্রতিভা লুকিয়ে আছে |

এরপর তিনি অবশেষে স্যারের কথা মতো স্থানীয় একটা ক্রিকেট ক্লাবে যোগদান করেন এবং সেখানেই ক্রিকেট খেলা শিখতে থাকেন | অন্যদিকে ধীরে ধীরে তার স্কুল শিক্ষাও শেষ হতে থাকে এবং গ্র্যাজুয়েশান করার জন্য তিনি ভর্তি হন রাঁচির সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে | কিন্তু ক্রিকেট খেলা আরো মনোযোগ দিয়ে শেখার জন্য এবং সেটাকে নিয়ে এগোনোর জন্য তিনি সেই গ্র্যাজুয়েশান কোর্সকে সম্পূর্ণ করতে পারেননি ও মাঝপথেই সেটা নিয়ে পড়াশোনা করা ছেড়ে দেন |

Cricket Career of MS Dhoni:

ধোনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ঝারখন্ড ক্রিকেট দলের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক করেন ১৯৯৯ সালে | আর অভিষেক ম্যাচেই তিনি ৬৮ রানের একটা অপরাজিত ইনিংস খেলেন | সেই গোটা মরশুমে তিনি মাত্র ৫টা ম্যাচ খেলার সুযোগ পান করেন এবং সর্বমোট রান করেন ২৮৩ |

পরবর্তী মরশুমে তিনি আরো নিজেকে উন্নত করেন এবং বেঙ্গল ক্রিকেট দলের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি রঞ্জি ট্রফিতে ৩৫০ এরও বেশি রান করেন | এরপর ২০০৩-২০০৪ সালে রঞ্জি ওডিআই ট্রফিতে আসামের বিপক্ষে প্রথম খেলায় অপরাজিত ১২৮ রান করেন ও ইস্ট জোন ক্রিকেট দলের পক্ষে ৪ ম্যাচে ২৪৪ রান করে দেওধর ট্রফি জয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন ।

সেই বছরই রঞ্জিতে দারুন খেলার জন্য, তাকে ভারতীয় “এ” দলে নির্বাচন করা হয় এবং তিনি সেই সুবাদে জিম্বাবুয়ে সফরে যান | হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আয়াজিত জিম্বাবুয়ে একাদশের বিরুদ্ধে ধোনি তার সেরা সাফল্য হিসেবে ৭টা ক্যাচ ধরেন ও ৪টে স্ট্যাম্পিং করেন |

মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী | MS Dhoni Biography in Bengali

এরপর আসে সেই বিশেষ দিন যেইদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ পান | তারিখটা ছিলো ২৩শে ডিসেম্বর, ২০০৪ সাল | বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেদিন ভারতীয় দল খেলতে নামে চিটাগং স্টেডিয়ামে | কিন্তু সেই অভিষেক ম্যাচে তিনি শূন্য রান করেন এবং রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান |

পরে অবশ্য বাকি ম্যাচ গুলোয় তিনি দুর্দান্ত খেলেন এবং দেখতে দেখতে তার ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সালে তিনি ওডিআই টিমের পাশাপাশি ভারতের টেস্ট টিমেও জায়গা করে নেন | টেস্টে ক্রিকেটে তার মোট রান হলো ৪৭৮৬ রান |

এরপর সাল ২০০৭, যেই বছর তিনি ভারতের হয়ে অধিনায়কত্ব করার দায়িত্ব পান ওয়ানডে এবং টেস্ট উভয় ফর্ম্যাটেই |

তারপর যা হয় তা হয়তো তোমার জানাই | ২০০৭ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত এরপর জয়লাভ করে, তারপর ২০১১ সালে আবার একদিনের ক্রিকেটেও বিশ্বকাপ জয় করে ভারত | সেইসাথে ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় ও টেস্ট ক্রিকেটে ১নং রাঙ্কিং তার সৌজন্যেই আসে ভারতের ঝুলিতে | এছাড়া চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে তিনবার আইপিএল জয় তো আছেই |

সব মিলিয়ে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে মহেন্দ্র সিং ধোনি হয়ে ওঠেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম অধিনায়ক |

Marriage Life of MS Dhoni:

অবশেষে ৪ই জুলাই, ২০১০ সালে, কোলকাতার মেয়ে সাক্ষী রাওয়াতের সাথে মহেন্দ্র সিং ধোনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন | বিয়ের ঠিক ৫ বছর পর অর্থাৎ ৬ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সালে তাদের একটা কন্যা সন্তান হয়, যার তারা নাম রাখেন জিভা |

Records of MS Dhoni:

১. ৩১ অক্টোবর, ২০০৫ তারিখে ধোনি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়পুরে সয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে ১৪৫ বলে অপরাজিত ১৮৩ রান করেন যা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দলের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান |

২.  ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতীয় উইকেট-রক্ষক হিসেবে সবচেয়ে কম ৯৩ বলে ১৪৮ রান করে ধোনি তার ১ম সেঞ্চুরি করেন।

৩.  ২১ অক্টোবর, ২০০৮ সালে ধোনির অধিনায়কত্বে ভারতীয় দল প্রথমবার তাদের ক্রিকেটে ইতিহাসে ৩২০ রানের বিশাল ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে।

৪.  ৫০টা ম্যাচ খেলা ভারতীয়দের মধ্যে ধোনির রানের গড়ই সর্বোচ্চ । এছাড়াও, ধোনির ব্যাটিং গড় একদিনের ক্রিকেটে উইকেট-রক্ষকদের মধ্যেও সর্বোচ্চ ।

৫. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২রা সেপ্টেম্বর, ২০০৭ তারিখে অনুষ্ঠিত খেলায় ৫টি ক্যাচ ও ১টি স্ট্যাম্পিং করে ধোনি ভারতীয় উইকেট-রক্ষক হিসেবে প্রথম এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্টের সাথে যৌথভাবে বিশ্বরেকর্ডধারী খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান ।

6.  ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ধোনি এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশী ৬টি ক্যাচ লুফে নেন এপ্রিল, ২০০৯ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে ।

৭. ক্যাপ্টেন হিসাবে সবচেয়ে বেশি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ জয় |

৮. বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ম্যাচ ফিনিশার |

৯. ভারতীয় অধিনায়ক হিসাবে টেস্টে সর্বোচ্চ রান (২২৪*) |

১০. পৃথিবীর সর্বপ্রথম অধিনায়ক যিনি ক্রিকেটের তিনটে ফর্ম্যাটেই ৫০ এর বেশি ম্যাচ খেলেছেন |

Awards of MS Dhoni:

১. রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার (২০০৭ সাল)

২. পদ্মশ্রী পুরস্কার (২০০৯ সাল)

৩. পদ্মভূষন পুরস্কার (২০১১ সাল)

৪. ফোর্বস ম্যাগাজিন কর্তৃক বিশ্বের ২৩ তম সর্বোচ্চ পরিশোধিত (Paid) ক্রীড়াবিদ |

৫. এল.জি পিপুলস চয়েস পুরস্কার (২০১৬ সাল)

 

Retirement of MS Dhoni:

অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি লেখেন, ‘‘সবাইকে এত ভালবাসা এবং সবসময়ের সাপোর্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ৷ আজ ১৫ আগষ্ট ২০২০ রাত ৭ টা ২৯ মিনিট থেকে আমাকে অবসর প্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে ধরে নিতে পারেন। ’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *