fbpx

আক্কেলপুরের সংস্কৃতি ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’তে ধান ভাঙ্গানো

মাহবুর আলম , জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি:
ঢেঁকি; বাঙালি জীবনে পিঠের সাথে অঙ্গাঙ্গিক ভাবে সম্পৃক্ত
ঢেঁকি ব্যবহার
ঢেঁকি ধান ভানা বা শস্য কোটার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রবিশেষ। প্রাচীন কাল থেকে ভারত উপমহাদেশে ঢেঁকি ব্যবহার হয়ে আসছে।
গঠন

এক খণ্ড পাথরের চটান বা কাঠ খণ্ডে গর্ত খুঁড়ে মুষলের সাহায্যে শস্য কোটা হয়। মুষলটির মাথায় লোহার পাত জড়ানো থাকে। মুষলটি ৪/৫ হাত লম্বা একটি ভারী কাঠের আগায় জোড়া লাগিয়ে গর্ত বরাবর মাপে দুটি শক্ত খুঁটির উপর পুঁতে রাখা হয়।

ব্যবহারের পদ্ধতি

শস্য কোটার জন্য ঢেঁকির গর্তে শস্য ঢেলে দিয়ে এক জন বা দু’জন ঢেঁকির গোড়ায় ক্রমাগত চাপ দেয়। অন্যদিকে মুষলের আঘাতের ফাঁকে ফাঁকে আরেক জন গর্তের কাছে বসে শস্যগুলো নাড়াতে থাকে।

জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের সংস্কৃতি ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’তে ধান ভাঙ্গানো এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। সময়ের আবর্তনে আর আধুনিকতার বিষাক্ত ছোবলে ক্রমাগত হারাতে বসেছে আমাদের বহু গ্রামীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। কুলা-ঢালা, গাইল-ছিয়া থেকে শুরু করে লাল-সবুজ রঙের কাগজ দিয়ে ঘুড়ি উড়ানো কিংবা গরুর হাল, লাঙল, মই, জোয়াল সবই আজ ক্যালেন্ডারের ছবি ছাড়া আর কিছু নয়।

অথচ এসব উপকরণ একসময়ে বাংলার প্রতিটি ঘরে থাকাটা ছিলো অপরিহার্য। কৃষকের ঘরে গরুর হাল লাঙল, মই থাকাটা ছিলো স্বাভাবিক না থাকলে তাকে কৃষক ভাবা-ই যেত না। সে রকম একটি উপকরণ হলো ঢেঁকি যা ষাট বা সত্তরের দশকে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরেই ছিল অপরিহার্য একটি উপাদান। ঢেঁকি ছিল না এমন বাড়ি বা সংসার আছে এমনটা সে সময় কল্পনা-ই করা যেত না। কৃষক মাঠ থেকে ধান কেটে আনতো।

সেই ধান মাড়িয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল বানানো হতো। তারপর সেই চালে রান্না হতো। তখন চাল ভাঙানোর কোন ধরনের মেশিন ছিল না। ঢেঁকি ছিল একমাত্র ভরসা। আলাদা একটি ঘরই থাকতো গৃহস্থের বাড়িতে যা ঢেঁকিঘর নামেই পরিচিত থাকতো। কালের বিবর্তনে তা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্পকে নিয়ে উপজেলার কানুপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তিনি কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষিকাজ তাদের পেশা।

কষ্টে অর্জিত ফসল তাদের প্রাণ। সেই নতুন ফসল দিয়ে করতো নবান্ন উৎসব সেটি তাদের সংস্কৃতি। কালের বিবর্তনে তাদের ওই সব সংস্কৃতিগুলোকে তারা অনেকেই হারিয়ে ফেলেছে। এ বিষয়ে উপজেলার ভান্ডারিপুর গ্রামের কৃষক হাসিন এক বুক কষ্ট নিয়ে বলেন, ‘মোর বাব-দাদাও কৃষক ছিল।

হামরা কৃষক পরিবারের ছওয়াল। আগের দিনে হামরা নতুন ধান কাটিয়া ঢেঁকি দিয়া ধান ভাঙিয়া সেই ধানের চাল দিয়া নানা রকম পিঠা, পায়েস করা হইছিল। কিন্তু এখন আর সেই দিন নাই। সময়ের অভাবে আগের মতন কোনো উৎসবই করিবার পারি না। আগের মতন নতুন ধান তুলবার সময় যে আনন্দ ছিল, এখন সেইটা আর নাই। মুই আইজো ভুলি যাও নাই আগের দিনের উৎসবের আনন্দের কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *