fbpx

নেপাল বিমান দূর্ঘটনা :

পর্যটকরা নেপাল ভ্রমনে আতংকিত!

নেপাল ভ্রমনে আতংকিত হচ্ছে পর্যটকরা।

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মারাত্মক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর অনেকের মনেই আকাশপথে ভ্রমণে ভয় কাজ করতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আকাশপথে ভ্রমণ নিরাপদ।

প্রকৃতপক্ষে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আশঙ্কা খুব কম।

যেমন ২০১৭ সালে ৪১০ কোটি মানুষ আকাশপথে যাত্রা করেছেন, কিন্তু গত বছরে একটিও বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি।

তবে একেবারেই যে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে না, তা নয়।

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মারাত্মক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর অনেকের মনেই আকাশপথে ভ্রমণে ভয় কাজ করতে পারে।

বিমান দুর্ঘটনার  ইতিহাস

ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৭ সালে স্পেনের টেনেরিফে। ওই দুর্ঘটনায় ৫৮৩ জন মারা যান। দুটি বিশাল বিমানের রানওয়েতে সংঘর্ষের কারণে এত মানুষ মারা যান।

ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি আট ঘণ্টায় ওই পরিমাণ মানুষ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর চেয়ে বেশি মানুষ রাস্তা পারাপারে বা বজ্রপাতে মারা যান।

বিমান সংস্থা বোয়িংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব ধরলে টানা ৩৯৮ দিন যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি।

এতে ২০১৭ সালটিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে নিরাপদ বছর বলা যায়।

২০১৭ সালের বিমানের মডেল ও দুর্ঘটনার হিসাব করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বোয়িং।

ওই প্রতিবেদনে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ও সাধারণ দুর্ঘটনাও হিসাবে ধরা হয়েছে।

১৯৫৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যিক বিমানের হিসাব ধরে দেখানো হয়েছে, এ সময় মোট ১ হাজার ৪২৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বোয়িংয়ের প্রতিবেদনে সবচেয়ে নিরাপদ বিমান হিসেবে তালিকায় রাখা হয়েছে

  • বোয়িং ৭৮৭,
  • বোমবারডায়ের সিআরজে ৭০০ / ৯০০ / ১০০০,
  • এয়ারবাস এ৩২০ / ৩১৯ নিও,
  • বোয়িং ৭১৭,
  • এয়ারবাস ৩৮০,
  • বোয়িং ৭৪৭-৮,
  • বোমবারডায়ার সি-সিরিজ,
  • এয়ারবাস এ ৩৫০,
  • এয়ারবাস এ-৩৪০।

এয়ারলাইন র‍্যাংকিংস নামের বিখ্যাত একটি ওয়েবসাইট নিরাপদ এয়ারলাইনসের একটি তালিকা

গত বছরের নভেম্বরে এয়ারলাইন র‍্যাংকিংস নামের বিখ্যাত একটি ওয়েবসাইট নিরাপদ এয়ারলাইনসের একটি তালিকা প্রকাশ করে।

ওই তালিকায় রয়েছে

  • এয়ার নিউজিল্যান্ড,
  • আলাস্কা এয়ারলাইনস,
  • অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ,
  • ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ,
  • ক্যাথি প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ,
  • এমিরেটস,
  • ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ,
  • ইভিএ এয়ার,
  • ফিন এয়ার,
  • হাওয়াই এয়ারলাইন্স,
  • জাপান এয়ারলাইনস,
  • কেএলএম, লুফথানসা,
  • কোয়ান্টাস,
  • রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইনস,
  • স্ক্যানডিভিয়ান এয়ারলাইন সিস্টেম,
  • সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস,
  • সুইস,
  • ভার্জিন আটলান্টিক ও ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া।

সমপ্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনার পর বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ট্যুরস এ্যন্ড ট্রাভেলস প্রতিষ্ঠান গুলো-

জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম পরিবারসহ নেপাল বেড়াতে যাবেন বলে সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলেছিলেন।

কিন্তু কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনার পর পরিবারের সবাই মিলে সেই পরিকল্পনা ভয়ে বাতিল করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, তার ছেলে ও মেয়ের ২৩ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ। এত অল্প সময়ে কোথায় যাওয়া যায়? আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে নেপালে যাব।

কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার পর বাচ্চারা এবং স্ত্রী প্রোগ্রাম বাতিল করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররা বলেন, নেপালের কাঠমান্ডুতে বেসরকারি বিমান ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে অনেক বাংলাদেশি নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করছেন।

ট্র্যাভেল এজেন্টরা বলেন, বাংলাদেশের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে অনেকেই ইউএস-বাংলার টিকিট ফেরত দিয়ে অন্য কোনো কোম্পানির ফ্লাইট নিচ্ছেন।

নেপাল বাংলাদেশিদের জন্য জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। কারণ সেখানে খরচ কম আবার বিমানবন্দর থেকেই সহজে ভিসা নেয়া যায়।

কক্সবাজার যেতে যা খরচ লাগে, সে রকম খরচে নেপালে ভ্রমণ করে আসা যায়। বিশেষ করে হিমালয়ের দেশসহ অনেক কিছুর কারণেই অনেকে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বেড়াতে যেতেন।

আরগন এভিয়েশন লিঃ, মহাখালী, ঢাকা-এর সিইও মোঃ আনোয়ার হোসেন বাবলা বলেন, “সম্প্রতি নেপালে বিমান দূর্ঘটনায় যাত্রীদের হতাহতের কারণে বর্তমানে নেপাল গমনেচ্ছুক সাধারণ যাত্রীরা আকাশ পথে ভ্রমণকে কিছুটা অনিরাপদ মনে করছেন।”

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের ঢাকা-নেপাল-ঢাকা এর ২জন যাত্রী তাদের বিমান টিকিট ফেরত দিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা- সৈয়দপুর রুটে মোট ৬ জন যাত্রী তাদের বিমান টিকিট ফেরত দিয়েছেন। এতে করে আমরা ব্যবসায়িক ভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি।”

মাহিমা ট্যুরস এ্যন্ড ট্রাভেলস লিঃ, গুলশান, ঢাকা-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রোটারীয়ন মোঃ সুলতান মাহমুদ আমাদের জানান, “তাদের ক্লায়েন্টদের অনেকেই নেপাল ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করে অর্থ ফেরত নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, ”গত ২ দিনে নেপাল গমনেচ্ছুক ৭ জন কাস্টমার তাদের টিকিট নিয়েছে, তারা আপাতত নেপাল যেতে চাচ্ছেন না এমনকি কোন বিমানে নয়।

আর.এম.কে হলিডেইস, – এর স্বত্বাধীকারী মোঃ জহির আহম্মেদ হেলাল বলেন, “সম্প্রতি নেপালে ঘটে যাওয়া ইউএস বাংলা বিমান দূর্ঘটনায় সাধারন দর্শনাথীরা সেখানে ভ্রমণ করতে ভয় পাচ্ছেন। এটা নেপালের পর্যটন সেক্টরের জন্য একটি বিরাট ক্ষতির বিষয়।”

তিনি বলেন, ’নেপালে কোন ইমার্জেন্সি কাজ ছাড়া কোন পর্যটক সেখানে যাচ্ছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের অন্যতম একটি এয়ারলাইন্স, কিন্ত বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের বিমানের প্রতি মানুষের আস্থা বিনষ্ট করেছে।”

ইসি এভিয়েশন লিঃ, গুলশান, ঢাকা-এর ম্যানেজার মোঃ কায়কোবাদ বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনাময় একটি খাত হল ট্যুরস এ্যন্ড ট্রাভেলস খাত। এই খাতে অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করছে। নেপালে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দূর্ঘটনার কারনে এই খাত সাময়িক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।

গত দুইদিন আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্রমনকারী তিন জন তাদের এয়ার টিকিট ফেরৎ দিয়েছে। তারা এই মহুর্তে এয়ারে ভ্রমন করতে চাচ্ছেন না।”

তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই সম্ভাবনাময় খাতটি অচিরেই তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। আকাশপথে ভ্রমণ নিরাপদ। প্রকৃতপক্ষে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আশঙ্কা খুব কম“।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *