fbpx

মানুষ তাঁর স্বপ্নের চাইতেও বড়

আব্দুর রাজ্জাক সুইটঃ  মানুষ মাত্রই স্বপ্ন আছে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে; ব্যর্থতা আছে, হতাশা আছে। স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন

গুণীজনরা বলে থাকেন যে, মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়। যাঁর স্বপ্ন যত বড় হয়, মানুষ হিসেবে সে তত বড় হয়। একবিংশ শতাব্দীর একদল উদ্যমী স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী ইতঃমধ্যে প্রমাণ করেছে যে, মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড় নয়; ইচ্ছে করলে একজন মানুষ তাঁর স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যেতে পারে অর্থাৎ স্বপ্নের চাইতেও বড় হতে পারে।

বিশ্বজয়ী ক্বারী হাফিজ নাজমুস সাকিব ও হাফিজ তরিকুল ইসলাম, এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহিম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজনীন, রন্ধনশিল্পী টমি মিয়া এবং বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান প্রমুখ দেশীয় উদাহরণের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি। এরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা; কিন্তু কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য আর কর্মদক্ষতায় তাঁরা সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে, স্বপ্নবাজ তরুণদের আইডল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁদের এই সাফল্যগাঁথা পথ আদৌ মসৃণ ছিল না। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আর অধ্যবসায়ের ফসল সাফল্য বা সফলতা নামক সোনার হরিণ।

বিপদসঙ্কুল পরিবেশ ও ব্যর্থতায় তাঁরা হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়েনি কিংবা হাল ছেড়ে দেয়নি। কোনো সংশয়, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বাঁধা তাঁদের স্বপ্ন হতে বিচ্যুত করতে পারেনি। যে পথিক জানে তাঁর গন্তব্য কোথায়, সে পথিক কখনো পথ হারায় না। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে সময়ের তারতম্য হতে পারে; ক্ষেত্রবিশেষে তারতম্য হওয়াটা স্বাভাবিক। অনেকে সময়ের এই তারতম্য মেনে নিতে পারে না। ফলে সময় জ্ঞানহীন স্বপ্নবাজদের নির্ঝরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। আবার, বাস্তবতা বিবর্জিত স্বপ্নও ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ। আর ব্যর্থতা থেকেই হতাশা নামক ব্যাধির উৎপত্তি।

বাস্তবতা নিরিখে স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ড. এপিজে আবুল কালামের বিখ্যাত উক্তি, স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো; স্বপ্ন সেটা, যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না। নেটিজেন/ডটকম দুনিয়ার স্বপ্নবাজ তরুণরা সারা রাত জেগে স্বপ্ন বুনে আর দিনে ঘুমিয়ে স্বপ্ন মঞ্চস্থ করে। সুতরাং শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তজ্জন্য প্রয়োজন কঠোর সাধনা আর দৃঢ় প্রত্যয় ও মনোবল। আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যর্থতা হলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপানে পৌঁছানোর সিঁড়ি মাত্র। ব্যর্থতা ছাড়া সফলতা আসেনা, কালেভদ্রে আসলেও তা কখনো টেকসই হয় না।

ব্যর্থতা, হতাশা, দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ মানব জীবনের স্বাভাবিক ও চলমান অনুষঙ্গ। এই সবকিছুর মধ্যে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ’লামিন কল্যাণকর ও শিক্ষণীয় কিছু বিষয় লুক্কায়িত রেখেছেন। যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা ও বাস্তবসম্মত জ্ঞানের অভাবে যা আমরা অনুধাবন করতে পারি না। অনেকক্ষেত্রে অনুধাবন করার চেষ্টাও করি না। মহাগ্রন্থ আল-ক্বুর’আনে বর্ণিত হযরত আইয়ূব (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ), হযরত হাযেরা (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত আছিয়া (আঃ), হযরত মারঈয়াম (আঃ) এবং হযরত ঈসা (আঃ) সহ অসংখ্য নবী-রাসুলের জীবনচরিত এর অনন্য উদাহরণ। এরই ধারাবাহিকতায় যুগে যুগে জন্ম নেওয়া জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সফল ও খ্যাতিমানদের জীবনচরিত তারই সাক্ষ্য বহন করে। এজন্যই জ্ঞানীরা সফল ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদের জীবনী অধ্যয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রকৃত ধর্মীয় ও বাস্তবসম্মত শিক্ষালাভ এবং বন্ধুবৎসল পারিবারিক কাঠামো এইসব সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়।

ব্রায়ান ডাইসনের ভাষায়, স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। তাইবলে, স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়, স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে চলো। স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন।

অনেকের কাছে সফলতা মানে ভালো ফলাফল, ভালো ফলাফল মানে ভালো চাকুরি, ভালো চাকুরি মানে ভালো বেতন। এক্ষেত্রে নীতি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তেমন গুরুত্ব বহন করে না। কর্পোরেট জগতের এই অতি আধুনিক ধ্যান-ধারণা রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ নতুন প্রজন্মকে বিপথগামী করছে বলা যায়। ফলে সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষার শিখনফল সমাজ ও রাষ্ট্র ভোগ করতে পারছে না এবং পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যিক সম্পর্কের সুদৃঢ় বন্ধন।

অর্থ আমাদের প্রয়োজন, অর্থের অনস্বীকার্যতা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ অর্থকে ঘিরে আমাদের সুখকল্প/স্বপ্ন আবর্তিত হয়। তারমানে এই নয় যে, অর্থই সকল সুখের মূল কিংবা অর্থই সফলতার একমাত্র মাপকাঠি। আবার, এটাও বলা উচিত নয় যে, অর্থই সকল অনর্থের মূল।

নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংস করে সুখস্বপ্ন/সুখকল্পের কবর দিও না। তোমাকে বাঁচতে হবে; তোমার স্বপ্নই তোমাকে এই অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখতে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাবে, তোমাকে অমরত্ব দান করবে। কীর্তিমানের যেমন মৃত্যু নেই, স্বপ্নেরও তেমন মৃত্যু নেই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *