fbpx

ভয়ঙ্কর হিজড়া আতঙ্কে নগরবাসি

আমরা আসব, টাকা রেডি রাখিস ,১৫ হাজারের কম হবে না কিন্তু: হিজড়া

এক বছর হলো বিয়ে হয়েছে বিউটির। থাকেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী। এরই মধ্যে হয়েছেন সন্তানসম্ভবা। হঠাৎ একদিন কোথা থেকে যেন তার বাসায় হাজির একদল হিজড়া। তারা জানতে এসেছে কবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে বিউটির, সেই সঙ্গে দিয়ে গেছে আগাম হুমকি—‘আমরা আসব, টাকা রেডি রাখিস। ১৫ হাজারের কম হবে না কিন্তু।’ এমন হুমকির পর বিউটির পুরো পরিবার আতঙ্কে।

‘হিজড়ারা শিশুদের জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা কেউ নেয় না। সাধারণ মানুষ আমরা কোথায় যাব। দেশে কী কোনো আইন নেই?’ হিজড়াদের অত্যাচারের শিকার রামপুরার বাসিন্দা নাজমা এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, আমার শিশুকন্যা নাজ, জন্মের পর ওর বাবা হিজড়াদের ৩০০০ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। দুই মাস যেতে না যেতে ওরা বাসায় এসে আবারও হাজির। এসেই ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। এরা শিশুকন্যা নাজকে উপরে ছুড়ে মারে আবার ধরে। মেয়েটি ভয়ে কান্নাকাটি করে। মেয়ের কান্না দেখে বুকটা ফেটে যায়। তারা ১৫ হাজার টাকা না নিয়ে বাসা থেকে যাবে না সাফ জানিয়ে দেয়। বার বার মেয়েটিকে উপরের দিকে ছুড়ে মারতে থাকে। আমি তাদের বুঝিযে বলি অল্প আয়ের মানুষ আমরা। ঘরে এত টাকা নেই। ২ হাজার টাকা নে। তারা বলে, আমাদের এক কথা, এক কাজ। যা চাইছি তা দিতে হবে। এরপর অপর এক হিজড়ার কাছে যাই। সে বলে ১০ হাজার টাকা দে। এক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা চায়। এরপর পাশের বাসা থেকে ৩ হাজার টাকা এবং বাসায় থাকা ২ হাজার টাকা দিয়ে হাত-পা ধরে বিদায় করি। প্রতিদিনই সারা দেশে ঘটছে এমন ঘটনা। তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হিজড়া সম্প্রদায় বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক ও ভয়ঙ্কর চরিত্র হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিজড়া বাহিনী। চাঁদা আদায়ে নগরীর অলিগলি চষে বেড়াচ্ছে তারা। হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। চাঁদা নেওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে না ফেরিওয়ালারাও। এ ক্ষেত্রে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকেই পাত্তা দিচ্ছে না। কেউ বাধা দিলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে। যে কারণে সামর্থ্য না থাকলেও অনেকে তাদের চাহিদামাফিক টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

হিজড়া দল:

দে টাকা দে দিবি না-! এভাবেই বাসা বাড়ি ছাড়াও সংঘবদ্ধ হিজড়া দল দোকানপাটে, কাঁচা বাজারে, রিকশা, ভ্যান, যানবাহনে দলবেঁধে হুঙ্কার দিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। চাহিদামতো টাকা না দিয়ে তাদের হাতে অনেকেই নাজেহাল হচ্ছেন। হিজড়াদের আচার-আচরণ যেন সাধারণ মানুষের ইজ্জত কেড়ে নেওয়ার মতো। বাঁচার উপায় নেই। ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু অসহায় অবস্থায় দিতে হচ্ছে হিজড়াদের চাহিদার চাঁদা। কিন্তু সবাই নির্বিকার। হিজড়াদের দৌরাত্ম্য এখন শুধু রাজধানীতেই নয়, সারা দেশে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৯ হাজার ৮৯২ জন হিজড়া সম্প্রদায়ের। আর বিভিন্ন বেসরকারি পরিসংখ্যানে হিজড়ার সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে অধিকাংশ পুরুষ হিজড়া। সম্প্রতি তাঁতিবাজারের বাসিন্দা হারুন অর রশীদের বাসায় হানা দেয় একদল হিজড়া। তারা হারুনের শিশুপুত্র তানিমকে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। তারা হারুনের কাছে ১৩ হাজার টাকা দাবি করে। হিজড়াদের ১০ হাজার টাকা দিয়ে কোনো মতে রক্ষা পায় হারুন। তিনি বলেন, তাঁতিবাজারের সবাই হিজড়া আতঙ্কে রয়েছে। হিজড়াদের কেউ কিছু বলতে সাহস পান না। কেউ কিছু বললেই মারধর করে হিজড়া নামের সন্ত্রাসীরা। আমার বাসায় গিয়ে শিশুপুত্রকে জিম্মি করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সাধারণ মানুষের শুধু একটাই কথা, সরকার থেকে জরুরি এদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। একমাত্র সরকারই পারে বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে এদের পুনর্বাসন ও স্বাভাবিক জীবন-ধারায় নিয়ে আসতে। সাধারণ মানুষের করুণ আকুতি হিজড়াদের কবল থেকে আমাদের রক্ষা করুন, বাঁচান। আমরা আর বিব্রতকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাই না। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা ঈশার (৪) মা পারুল বলেন, বাসায় আমার মেয়ে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ কে যেন কড়া নাড়ে। খুলে দেখি ৭/৮ জনের হিজড়ার দল। তারা এসেই আমার মেয়েকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করে। এরপর ৫ হাজার টাকা দাবি করে। আমার মেয়ে ভয়ে কান্না শুরু করে। মেয়ের কান্না দেখে আমারও কান্না আসে। এরপর আমি তাদের বলি এত টাকা নেই। ১০০০ টাকা নিয়ে যান। তারা বলে, যা চাইছি তা দিতে হবে। এরপর হাত-পা ধরে ২ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করি। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের বয়স চার বছর। এ পর্যন্ত ছয়বার হিজড়াদের টাকা দিয়েছি। তারা আমার কাছ থেকে ছয়বারে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। হিজড়াদের বিষয়ে খিলগাঁও থানায় অভিযোগ করেছি।

তবে পুলিশ বলছে, তারা চেষ্টা করছে এদের নিয়ন্ত্রণ করতে। এক্ষেত্রে দ্রুত সাহায্য পেতে ৯৯৯ এ কল করার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ৯৯৯ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পুলিশের সহযোগিতা নিতে হবে সাধারণ মানুষকে। এক্ষেত্রে তারা ৯৯৯ এ কল করে দ্রুত সেবা পেতে পারেন। বাসা বাড়িতে তারা চাঁদাবাজির জন্য আসলে এই হটলাইনে কল করলে দ্রুত পুলিশ পাঠানো সম্ভব হবে। তবে এমন অভিযোগ আমরা বেশ কিছু পেয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *