fbpx

ভোটগ্রহণ শেষ, এখন চলছে গণনা, ফল রাতে

ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গণনা। তবে ফলাফল পেতে রাত হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এর ফল প্রভাব রয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। এই ভোটে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। কয়েকটি স্থানে ব্যালট ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকার ৮টা থেকে টানা ভোটগ্রহণ চলে। শেষ হয় বিকেল ৪টায়। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কারচুপি, দলীয় এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়া, জালভোট দেওয়া, কেন্দ্র দখল, দলীয় নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার ও সরকারদলীয়দের হুমকি-মারধরের অভিযোগ করেছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করা বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি ভোট বন্ধের দাবি জানান। তবে তার সেই দাবি পূরণ না হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিলেন বিএনপির এই প্রার্থী।

তবে নৌকা প্রতীক নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ফল যাই হোক তা মেনে নেবেন তিনি। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণে অনিয়ম পেয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা। সেখানে নৌকা প্রতীকের ব্যাজ পরে যুবকদের জোরপূর্বক ব্যালটে সিল দেওয়ার বিষয়টি দেখেছেন। এ ছাড়া দুটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। অবশ্য নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দীন মণ্ডল বলেছেন, ৫/৬টি কেন্দ্রে অনিয়মের খবর তিনি পেয়েছেন। সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়েছে এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শতাধিক কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ করেন। অন্যদিক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দলটি সব জায়গায় এজেন্ট দিতে পারেনি। তিনি বিএনপির করা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, গাজীপুরে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুটি প্রতিনিধিদল দিনের পৃথক পৃথক সময়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে নাশকতার চেষ্টা করা হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করা ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রমাণ হিসেবে বিএনপির নেতা মিজানুর রহমানের সঙ্গে এক ব্যক্তির টেলিফোনের কথোপকথনও ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য বিভিন্ন কেন্দ্রে ও নগরের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়। সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ চলে।ভোট উপলক্ষে সকালেই বাসা থেকে বের হয়েছেন প্রার্থীরা। দিনভর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে ভোটের খবর নেবেন তাঁরা। সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। শহরের প্রবেশমুখগুলোতে দেখা গেল, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) একাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেল টহল দিচ্ছে। তারা শহর প্রদক্ষিণ করছে।

সিটি নির্বাচনের মেয়র পদের প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার—দুজনই বলেছেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। তবে হাসান সরকারের সন্দেহ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে। তিনি সকালে ভোট দিয়ে বলেন, ভোট সুষ্ঠু হলে তাঁর বিজয় শতভাগ নিশ্চিত। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হবে। বিএনপির প্রার্থীর পরাজয়ের ভয়ে আগেই এসব কথা বলছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হবেন এমন এ কথা তিনি ভাবতে পারছেন না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট দেওয়া হয়। এ সব কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ভোটারের তাদের সন্তুষ্টির কথা জানান। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্ল্যা খানকে পরাজিত করেন।

এবারের গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৫৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই ৫৭টির মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও সংরক্ষিত ১৯ নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন এবং একটি মেয়র পদের জন্য সাতজন প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। মোট ৩৪৫ জন প্রার্থী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচন কমিশন বলছে, সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন পুরুষ এবং ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী ভোটার। নিরাপত্তার জন্য ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে সেখানে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রায় ১২ হাজার র‍্যাব, পুলিশ, আনসার মোতায়েন রয়েছে। তিনি জানান, নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে ৫৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সংরক্ষিত আসনে ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স আছে। ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭টি এবং অতিরিক্ত একটিসহ মোট ৫৮টি টিম মোতায়েন আছে। প্রতি দুটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ২৯ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। এদের মধ্যে ১২ প্লাটুন জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া ৭ প্লাটুন কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায়, ১০ প্লাটুন টঙ্গী এলাকায় ছিল। এ ছাড়া পুলিশ এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৮টি মোবাইল ফোর্স, ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে চার দিনের জন্য ৫৭টি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন। আরও ১০ জন অতিরিক্ত হিসেবে ৬৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন রয়েছেন। সিটি করপোরেশনের প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে মোট ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন। তাঁরা ২৪ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত নগরীতে দায়িত্ব পালন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *