fbpx

বিএনপি-আ.লীগের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সঙ্গে তার সরকারের তুলনা করেছেন। আর দুই সরকার কতটুকু কাজ করেছে সে তুলনা থেকে জনগণকে তাদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে এই ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ বিষয়ে তার আশার কথা বলেন। সেই সঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলের উন্নয়ন চিত্র, চলমান বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

জনগণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদেরই ঠিক করতে হবে- আপনারা কী চান। আপনারা কি দেশকে সামনে এগিয়ে যাওয়া দেখতে চান, না বাংলাদেশ আবার পেছনের দিকে চলুক তাই দেখতে চান।’

‘একবার ভাবুন তো মাত্র ১০ বছর আগে দেশের অবস্থানটা কোথায় ছিল?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। ৯ বছর একটানা জনসেবার সুযোগ পেয়েছি বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে।

‘বিশ্বব্যাপী মন্দা থাকা সত্বেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। জনগণ এর সুফল ভোগ করছেন।

 

দুই সরকারের তুলনা

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি সরকারের শেষ বছর ২০০৫-২০০৬ সালে দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ ডলার। সেটা প্রায় তিন গুণ বেড়ে এখন হয়েছে এক হাজার ৬১০ ডলার।

বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের শেষে দারিদ্র্য প্রায় অর্ধেক কমে এখন এই হার দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশ।

বিএনপির শেষ বছরে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের বার্ষিক উৎপাদন বা জিডিপির আকার ছিল চার লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের আমলে এটি পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায়।

আবার বিএনপি সরকারের আমলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৫.৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে এটি হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ।

আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেয়ার সময় ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে মূল্যষ্ফীতি ছিল ১২.৩ শতাংশে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মুল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৫.৮৪ শতাংশে।

বিএনপি আমলের চেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে চার গুণ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ০.৭৪৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপির শেষ বছরের তুলনায় আওয়ামী লীগ আমলে চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার হয়েছে প্রাণ সাত গুণ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রায় চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।
বিএনপির শেষ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির তুলনায় বর্তমান অর্থবছরে এটি বেড়েছে আট গুণেরও বেশি। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ১৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় এক লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকায়।

একইভাবে বিএনপির শেষ বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে তিন গুণ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০.৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ সাথে তা হয় ৩৪.৮৫ বিলিয়ন ডলার।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে দুই আমলের পার্থক্য আরও বেশি। বিএনপির শাসনামলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা প্রায় ১০ গুণ বেড়ে হয়েছে ৩৩.৪৪ বিলিয়ন ডলার।

বিএনপি শাসনামলে ২০০৫ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বিদেশে চাকরি হয়। আর সদ্য সমাপ্ত ২০১৭ সালে বিদেশে চাকরি হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৩০ জনের।

দুই সরকারের আমলে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সের পার্থক্য প্রায় নয় বিলিয়ন ডলার। বিএনপির শেষ বছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটা বেড়ে হয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার।

এর বাইরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে।

এর বাইরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ, স্বাক্ষরতার হার ৭২.৩ শতাংশে উন্নীত হওয়া, সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চালুর কথাও তুলে ধরেন।

ঢাকাটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *