fbpx

বিএনপির হাল ধরবে কে ?

বিএনপির হাল ধরবে কে ? প্রায় দুই মাস ধরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

নির্জন কারাগারে একমাত্র বন্দী বেগম জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও শারীরিক চিকিৎসা করাতে দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। মাঝেমধ্যে সেখানে দলীয় কর্মসূচিতেও আসছেন তিনি।

এ অবস্থায় ঢাকায় দলের হাল ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সর্বশেষ গতকাল সকালে তিনিও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শীর্ষ তিন নেতার অনুপস্থিতিতে দল চলবে কীভাবে— এ নিয়ে বিএনপির ভিতরে-বাইরে চলছে নানা আলোচনা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও এ নিয়ে উত্সুক দৃষ্টি রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, বেগম জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর দল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সবাই এখন বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে মাঠে সরব। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও তার নির্দেশনা পাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। মহাসচিবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

হাসপাতালে তিনি দলের মহাসচিবের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে কয়েক দফায় ফোন দেন। স্থায়ী কমিটিসহ নেতা-কর্মীর ঢল নামে হাসপাতালে। বিএনপি মহাসচিবের শারীরিক অবস্থাও ভালোর দিকে। গতকালও সেখান থেকেই তিনি বরিশাল বিভাগের নেতাদের বলছেন, ৭ এপ্রিল জনসভা সফল করতে হবে। তবে আজ তার একটি এনজিওগ্রাম হতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একটি গঠনতন্ত্র থাকে। বিএনপিরও রয়েছে।

সুতরাং দল তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তা ছাড়া শীর্ষ তিন নেতার অনুপস্থিতি থাকলেও দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই দল পরিচালিত হবে। আমার মনে হয়, কারও সাময়িক অনুপস্থিতিতে বিএনপির মতো একটি বড় দল কোথাও আটকে থাকবে না।’

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, শীর্ষ দুই নেতার পরামর্শ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবই দল পরিচালনা করছেন। দু-এক দিন তাকে হয়তো হাসপাতালে থাকতে হবে। এরপর সুস্থ হলেই তিনি দলের হাল ধরবেন।

খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে গুরুতর নয় : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, তারা খালেদা জিয়াকে দেখেছেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি অসুস্থ, তবে গুরুতর নয়। গতকাল দুপুরে শামসুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

গণমাধ্যমকে অধ্যাপক শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, তার ঘাড়ে, বাঁ হাতে, পায়ে ব্যথা বোধ করেন। হাত ঝিমঝিম করে। খালেদা জিয়া আগে যেসব ওষুধ সেবন করতেন, আমরা আরও কিছু ওষুধ বাড়িয়ে দিয়েছি। রক্ত ও এক্স-রে পরীক্ষা দিয়েছি, যা কারা কর্তৃপক্ষ করাবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছি। সর্বোপরি তিনি অসুস্থ তবে, গুরুতর নয়।’ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পর্কে জানাতে সকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিতে পারেনি। হাসপাতালের উপপরিচালক শাহ আলম তালুকদার বলেন, মেডিকেল বোর্ডের কোনো প্রতিবেদন তাদের কাছে আসেনি।হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম তালুকদার বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের কোনো প্রতিবেদন আমরা পাইনি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসিরউদ্দীনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরিচালক মন্ত্রণালয়ে আছেন। তাই নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে নেওয়া হয়। সে সময় থেকে এখন তিনি জেলেই আছেন।

আজ মির্জা ফখরুলের এনজিওগ্রাম হতে পারে : গতকাল বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। সেখানে রবিবার রাতে দলের বৈঠকের সারসংক্ষেপ নিয়ে গণমাধ্যমকে জানানোর কথা ছিল তার। এ ছাড়া সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তার পূর্বনির্ধারিত আরও একটি অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু সকালে বাসা থেকে বেরোনোর সময় হঠাৎই বুকে ব্যথা অনুভব করলে রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। অবশ্য সুস্থ হয়ে ওঠায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এ প্রসঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ জানান, মহাসচিবের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি এখন সুস্থ আছেন। তাকে কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) তার একটি এনজিওগ্রাম করানো হতে পারে।

মহাসচিবের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমিনও সার্বক্ষণিক হাসপাতালে বিএনপি মহাসচিবের পাশে রয়েছেন। মির্জা ফখরুলের মা ফাতিমা আমিনও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় বেশ কিছুদিন ধরে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *