fbpx

‘পরিবর্তন সম্ভব’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

সিঙ্গাপুরে কিমের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে ‘পরিবর্তন সম্ভব’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

উত্তেজনা, হুংকার, হুঁশিয়ারি, ব্যক্তিগত আক্রমণ… গত দেড় বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল এমনই। তবে সব পেছনে ফেলে নতুন দিনের যাত্রা শুরু করেছেন এ দুই নেতা।

ট্রাম্পের বক্তব্যে কিমের জন্য ছিল প্রশংসা। কিমকে ‘দারুণ মেধাবী’ আখ্যায়িত ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (কিম) খুব কম বয়সে একটি দেশের ক্ষমতা নেন ও কঠোরভাবে দেশটি পরিচালনা করেন।’ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘অত্যন্ত ঘটনাবহুল ২৪ ঘণ্টা পার করলাম আমরা। সত্যি বলতে ঘটনাবহুল তিনটি মাস পার হলো।’

উত্তর কোরিয়ায় আটকা পড়া মার্কিন সেনাদের ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন কিম। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা আমাদের সেনাদের ফেরত চেয়েছি ও আশানুরুপ উত্তর পেয়েছি।’

ট্রাম্প-কিম বৈঠকে স্থান পেয়েছে মানবাধিকার প্রসঙ্গও।

‘ওয়ার গেমস’কে উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ কথা বিশ্লেষকদের দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে নিয়মিত সামরিক মহড়া করে। এখন ট্রাম্প এটিকে ‘উসকানিমূলক’ বলছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন সেনা কমানোর বিষয়ে ট্রাম্প সরাসরি কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, এখনই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সেনা তুলে নেবেন না তিনি।

ট্রাম্প জানান, স্বাক্ষরিত বিবৃতির শর্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এখনই সেনাবাহিনী সরিয়ে নেবে না। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে নিয়মিতভাবে আয়োজন করা যৌথ সামরিক মহড়া দেওয়া বন্ধ করবে তারা। নিয়মিত এসব সামরিক মহড়ার কারণে ক্ষুব্ধ ছিল উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নানা রকমের অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছি আমরা। যখন আমরা জানতে পারব পরমাণু অস্ত্র আর কোনো সমস্যা নয়, তখনই অবরোধ তুলে নেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘পরিবর্তন সম্ভব। চেয়ারম্যান কিমের সঙ্গে আমার বৈঠক আন্তরিক, গঠনমূলক আর খোলামেলা হয়েছে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে বিভিন্ন সময় বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে নির্মম নির্যাতন চলে উত্তর কোরিয়ায়। আজকের সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক ট্রাম্পের এ মন্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ট্রাম্প এখনো এ কথা বিশ্বাস করেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘অামি বিশ্বাস করি উত্তর কোরিয়ার অবস্থা খারাপ। কিন্তু আমাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল পরমাণু অস্ত্রমুক্তকরণ।’

উত্তর কোরিয়ার জন্য হুমকি হতে চাননি বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘কিমের সঙ্গে আলোচনার পর্যায়ে আমি উত্তর কোরিয়ার জন্য হুমকি হতে চাই না।’ উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চয়তার যে অঙ্গীকার ট্রাম্প আজ করেছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করনে সাংবাদকিরা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মাত্র একদিনের জন্য সিঙ্গাপুরে এসেছি। নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার সময় ছিল না।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আবার দেখা করাটা বড় কোনো ব্যাপার নয়। আরও অনেক ব্যাপারেই আমাদের কথা বলা বাকি আছে।’ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অতীত ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ট্রাম্পের কথায়। ট্রাম্প বলেন, ‘গতকালের ঝগড়া আগামীকালের যুদ্ধে পরিণত হবে না।’

ট্রাম্প-কিম বৈঠকের সমালোকদেরও এক হাত নিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প কি চুক্তি করতে কি করে বসেন, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। তাদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কোনো কিছুতেই ছাড় দেইনি। শুধু ট্রাম্পকে যারা অপছন্দ করেন তারাই বলবেন যে আমরা অনেক বড় কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কতটা সমৃদ্ধ, সে সম্পর্ক জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার খুব ভালো গোয়েন্দা তথ্য আছে। তাদের বেশ ভালো পরমাণু অস্ত্র আছে।’ অর্থনৈতিক অবরোধের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য অর্থনীতি নিয়েও কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার খুব সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে। উত্তর কেরিয়ার সেনা মহড়ার সময় এসব সমুদ্র সৈকত দেখেছি।’

ঐতিহাসিক এ বৈঠক আয়োজনের পেছনে চীনের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘চীন অসাধারণ একটা দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার অাগেই আমি প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারি।’

আর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি খুব, খুব ভদ্রমানুষ। আমার বন্ধুও। তিনি খুব খুশি হবেন। আমি ইতোমধ্যে কি ঘটেছে, সে ব্যাপারে তাকে অবহিত করেছি।’ উল্লেখ্য, কিম জং-উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এ বৈঠকটি আয়োজনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *