fbpx

নতুন নেতৃত্বর জন্য অপেক্ষা সিঙ্গাপুর

ষাটের দশকে স্বাধীন হয়েছে সিঙ্গাপুর। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে দেশটি আজ উন্নত রাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে আরও বলিষ্ঠ নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশায় রয়েছে তারা।

সিঙ্গাপুরের এই চোখ-ধাঁধানো অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও ‘সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার জনক’ হিসেবে খ্যাত লি কুয়ান ইউ। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে সিঙ্গাপুর স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতার আগে ১৯৫৪ সালে তিনি দ্য পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫৯ সালে লি কুয়ানের নেতৃত্বে দলটি ক্ষমতায় আসে। শুরু হয় পিএপির শাসনামল। দলটি দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। লি কুয়ান তিন দশকেরও বেশি সময় সরকারপ্রধান হিসেবে দেশটি শাসন করেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশটি তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের দেশে পরিণত হয়। বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তবে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লি কুয়ান ইউ ছিলেন সংসদ সদস্য।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে একদলীয় সরকারব্যবস্থা প্রচলিত। সেখানে একাধিক বিরোধী দল থাকলেও ক্ষমতায় তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা সিঙ্গাপুরকে কার্যত একদলীয় শাসনব্যবস্থার রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। তবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত বলে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছে সিঙ্গাপুর সরকারের। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, সিঙ্গাপুর অনেক দিন ধরেই এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ।

লি কুয়ান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে একই বছর দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন গোহ চক তং। ১৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। তাঁর শাসনামলে বেশ কিছু সংকটে পড়ে দেশ। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট, সন্ত্রাসভীতি ও সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসের মহামারি আকারে দেখা দেওয়া অন্যতম।

ক্ষমতার পালাবদলে দেশটিতে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছেন স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেওয়া লি কুয়ান লিউয়ের ছেলে এবং গোহ চক তংয়ের উত্তরসূরি লি সিয়েন লুং। পিএপির নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ২০০৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। মাঝখানে তাঁর পার্টির জনপ্রিয়তা কমলেও সর্বশেষ ২০১৫ সাধারণ সংসদ নির্বাচনে অবশ্য এর প্রভাব পড়েনি। বরং সংসদের ৮৯ আসনের মধ্যে ৮৩টি আসন পেয়েছে তাঁর দল। ক্ষমতায় থাকতে দরকার ছিল ৪৫টি আসন।

এরই মধ্যে দেশটির তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতার আসার অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। পরবর্তী সাধারণ সংসদ নির্বাচন হবে ২০২১ সালে। এ নির্বাচনেও লি সিয়েন ক্ষমতায় আসবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার আগ থেকে প্রায় ছয় দশক ধরে দলটির একচ্ছত্র আধিপত্যে অনেকে ঈর্ষান্বিতও বটে। এরই মধ্যে ২০২২ সালে ৭০তম জন্মদিনে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন লি সিয়েন লুং। সংগত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, কে বা কারা আসছেন সিঙ্গাপুরের পরবর্তী নেতৃত্বে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চান তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে তরুণ প্রজন্ম আসুক ক্ষমতার শীর্ষে। সেই লক্ষ্যে লিয়ের মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ষাটোর্ধ্ব তিনজন প্রবীণ মন্ত্রী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। নবীনদের আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী লি উত্তরসূরি হিসেবে হেং স্যুই কেটকে অর্থমন্ত্রী, ওগো ইয়ে কিংকে শিক্ষামন্ত্রী এবং একেবারে নবীন চান ইয়ে সিংকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এর আগে হেং স্যুই কেট শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সিঙ্গাপুরের আর্থিক কর্তৃপক্ষ বিভাগে ভালো নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রথাগত রাজনীতিক না হলেও জনগণের দৃষ্টিতে তাঁর ধারাবাহিক উত্থানকে সাবেক এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা প্রশংসা করেছেন। জনগণের মতামতে সরকারি সিদ্ধান্তে গুরুত্ব দেওয়া স্বভাবতই সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন। কিন্তু সেই প্রতিফলন বাস্তবায়ন দেশটিতে কতটুকু সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। জনপ্রিয়তা ও সুশাসন এক বিষয় নয়। দল বা সরকারের জনপ্রিয়তা থাকলেই সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বললে তা যৌক্তিক হবে না। শাসক বা সরকারের জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক স্বচ্ছতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিচায়ক। কিন্তু সেখানে একক আধিপত্য থাকায় জবাবদিহি ও অংশমূলক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ।

কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে গণমাধ্যম। দেশটিতে প্রায় সব গণমাধ্যমকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। ফলে সেখানকার গণমাধ্যমগুলো সরকারের মুখপত্র ও তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড নিয়ে সাফাই গাওয়াই এসব গণমাধ্যমের প্রধান কাজ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে লি সরকার গুরুত্ব দেয় না; বরং গত মার্চ মাসে সংসদে আইন পাস করে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আরও গলা টিপে ধরেছে। সরকারের বিরুদ্ধে যায়—এমন কোনো কর্মসূচি, ভিডিও, ছবি নিষিদ্ধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একটি সংসদীয় কমিটি তা নজরদারি করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনলাইনে মিথ্যা তথ্য প্রচার করলে সংসদীয় কমিটি তা মোকাবিলা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *