fbpx

দেশে এখন নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চলছে : সিপিবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে সে পথেই এগোচ্ছে দলটি।দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, অসাংবিধানিক কোনো শক্তি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, তাই বর্তমানে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের’ মধ্যেই তাঁদের দল নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সামনের দিনগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে দলটি।

২০১৪ সালে ‘নির্বাচনী পরিবেশ না থাকায়’ সিপিবি তখন অংশ নেয়নি। তবে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে এখন নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চলছে। কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে হবে, যাতে অসাংবিধানিক কোনো শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে।’
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে শাহ আলম বলেন, ‘যে ফরম্যাটেই (নির্বাচনকালীন দলীয় বা নিরপেক্ষ সরকার) নির্বাচন হোক, নির্বাচনে অংশ নেব। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে শেষ পর্যন্ত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করব।’

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফীর কথায়ও একই আভাস পাওয়া গেল। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হলে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে তাঁদের দাবি, একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন যেন থাকে।

মো. শাহ আলমমো. শাহ আলমউপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একক বা অন্যান্য বাম দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে সিপিবি নির্বাচনে অংশ নেয়। ভোটযুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রায় সব কটিতেই তারা অংশ নিচ্ছে।

২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সিপিবির দলীয় প্রার্থী পান ২ হাজার ৪৭৫ ভোট এবং দক্ষিণে বাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দেয় দলটি। সেখানে বাসদ প্রার্থী পান ১ হাজার ২৯ ভোট। রংপুরে বাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দেয় সিপিবি। সেখানে তাদের ভোট ১ হাজার ২৬। খুলনা সিটি করপোরেশনে সিপিবির ভোট ৫৩৪ ও গাজীপুরে ৯৭৩। অবশ্য চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় দলটি কোনো প্রার্থী দেয়নি।

এ মাসে অনুষ্ঠেয় বরিশাল সিটি করপোরেশনে সিপিবি মেয়র ও একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে। তবে সিলেটে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে যৌথভাবে মেয়র পদে লড়বে দলটি। রাজশাহীতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে।

এই তিন সিটির নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে আবদুল্লাহ আল ক্বাফী বলেন, তাঁরা নির্বাচনী প্রচারণার ওপর জোর দিচ্ছেন বেশি।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের ভোটের অবস্থান নিয়ে সিপিবি নেতারা বলছেন, এখনকার নির্বাচনগুলো গ্রহণযোগ্য না। প্রশাসনিক দলীয় ও পরিকল্পিত নির্বাচন। সাজানো নির্বাচন হওয়ায় তাঁদের মনোনীত প্রার্থীরা যে ভোট পান, তাও ঘোষণা করা হয় না। গাজীপুরের উদাহরণ টেনে নেতারা বলেন, তাঁদের এক সমর্থক ভোট দিতে গেলে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ব্যালটে সিল দিতে পারলেও মেয়র প্রার্থীর ব্যালটে সিল দিতে পারেননি। সিপিবি নেতারা বলছেন, তাঁরা নির্বাচনে জিততে পারতেন না। কিন্তু সুষ্ঠু ভোট দলে দলীয় প্রার্থীর ভোটের পরিমাণ আরও বাড়ত।খালেকুজ্জামানখালেকুজ্জামান

২০০৮ সালে সিপিবি এককভাবে ৫০টি আসনে প্রার্থী দেয়। তবে ভোটে কোনো আসন পাননি। দলটি সর্বশেষ ১৯৯১ সালের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। অবশ্য সেবার তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করে। এবারের জাতীয় নির্বাচনে সিপিবি বাসদের সঙ্গে জোট বেঁধেই অংশ নেওয়ার কথা ভাবছে। সঙ্গে অন্যান্য সমমনা দলও থাকবে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে তাদের প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিপিবির জোট সঙ্গী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) অবশ্য বলছে, সবকিছু নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। পরিবেশ থাকলে সিপিবি-বাসদ-বাম মোর্চা বা সমমনা দল একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।’ তিনি বলেন, টাকা ও পেশিশক্তি তাঁদের নেই। তাই তাঁরা দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। সিপিবির সঙ্গে যৌথভাবে তাঁরা নির্বাচনের জন্য অন্তত ২০০ প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনা করছেন। সমমনা অন্যান্য দলকে বিবেচনায় রাখছেন। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হলে সবকিছু বুঝে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে এই বাম নেতা বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় অনিয়ম হচ্ছে অনেক। তবু তাঁরা অংশ নিচ্ছেন, কারণ জনগণের সামনে এই অনিয়ম তুলে ধরার জন্য। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই সরকার সাজানো নির্বাচন করতে পারেনি। তাই সেখানে তাঁদের একজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য সিটিতেও যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হতো, তাহলে তাঁদের আরও কয়েকজন প্রার্থী ভালো করতে পারতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *