fbpx

ট্রাম্প আগ্রাসী, এখনো সংযমী চীন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর চীনও বলে দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিলিয়ন ডলারের আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে। তা সত্ত্বেও চীন এখন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ফল, শূকরের মাংস, ওয়াইন, জোড়াবিহীন ইস্পাতের পাইপসহ যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। চীন বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ জানাতে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার দ্বারস্থ হবে। আর সংস্থাটির নিয়ম মেনেই তারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপিত হলেও চীনের অর্থনীতিতে এর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণার সময় বেশ যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখালেও ঘোষণার যে বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক অতটা ঠাসা নয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে শুল্ক আরোপ না করে শুধু হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও উত্তেজনা বেড়েছে এবং চীনের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য নীতির অধ্যাপক এসওয়ার প্রসাদ বলেন, ‘মনে হচ্ছে, আমরা বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত হতে যাচ্ছি।’ যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে অস্ত্রে শাণ দিয়েছে। এবার তারা অস্ত্র বের করেছে। একই সঙ্গে চীনও অস্ত্র বের করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, উভয় পক্ষই বড় ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। ট্রাম্পের প্রবৃত্তি ও রাজনৈতিক জয়লাভের আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আপাতত এই বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমিত হবে না।’

অন্যদিকে বাণিজ্যযুদ্ধের ভয়ে সারা পৃথিবীতেই শেয়ারবাজারের পতন হয়েছে। শুক্রবার হংকং ও সাংহাই বাজারের গুরুত্বপূর্ণ শেয়ারের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩ দশশিক ৪ শতাংশ পড়ে গেছে। এর আগে ওয়াল স্ট্রিটেও সূচকের পতন ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুসারে ৩০ দিনের গণ-আলোচনার পর সুনির্দিষ্ট কিছু চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে মার্কিন প্রশাসন চীনা সরকারের সঙ্গে আরও আলোচনা করতে পারে। এই সুযোগে লবিস্টরা খদ্দেরদের পণ্য এই তালিকা থেকে বাদ দিতে জোর চেষ্টা চালাবে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক উইলিয়ামস মনে করেন, এই শুল্ক আরোপের ঘোষণায় চীনের দেশজ উৎপাদনের শূন্য দশমিক ১ শতাংশের বেশি ক্ষতি হবে না। আর জেপিমর্গান বলেছে, এতে চীনের মোট রপ্তানির ২ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষতি হবে। ২০১৭ সালে দেশটির মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। তিনি আরও বলেন, যা হবে তা হলো এতে চীনের ওপর বড়জোর একটা চপেটাঘাত পড়বে, আর কিছু নয়। আর শুক্রবার চীন মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে তারা বড়জোর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে কী প্রভাব পড়ে, তা খতিয়ে দেখে চীন আরও কিছু মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে পারে। দ্বিতীয় দফায় তারা ওসব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে। তারা বলেছে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য পক্ষ এই প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পর মতামত দেবে। এর অর্থ হলো, ওই তারিখের পরই শুল্ক আরোপ করা হবে।

কিন্তু কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা এবং তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার চীন আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। বিশেষ করে চীন বিমান ও সয়াবিনে শুল্ক আরোপ করতে পারে। চীন এ দুটি মার্কিন পণ্যের বড় বাজার। যুক্তরাষ্ট্র বছরে ১ হাজার ২৪০ কোটি ডলারের সয়াবিন রপ্তানি করে। আর তার বোয়িং বাজারে ইউরোপীয় এয়ারবাসের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই এ দুটি জিনিস চীনের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

আর মার্কিন পণ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চীন রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সম্প্রতি এই সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে। ইইউ বৌরবন, ব্লুজিন্‌স ও মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, যেগুলো রিপাবলিক রাজনীতিকদের মালিকানাধীন। আর এগুলো যে রাজ্যে তৈরি হয় সেগুলো ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছে। চীন শূকরের মাংসে শুল্ক বসিয়েছে। যেটি আসে নেব্রাস্কা ও মিডওয়েন্ট থেকে, এই রাজ্য দুটিও ট্রাম্পের সমর্থক।

সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান স্টাডিসের উপপরিচালক সং গুয়োউ বলেন, ‘আমি বলব, চীনের প্রস্তাবে যথেষ্ট সংযম আছে।’ তিনি চীনের প্রতিক্রিয়াকে ‘সতর্ক ক্রোধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *