fbpx

চাঁদপুর -১ আসনে চলছে নির্বাচনী প্রচার, কোন দলই নেই পিছিয়ে

মোঃ মহসিন হোসাইনঃ চাঁদপুর-১ আসনে বইতে শুরু করেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। ইতিমধ্যেই নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার ও ফেস্টুনে বিভিন্ন শুভেচ্ছামূলক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীতার পূর্বাভাস দিচ্ছেন। এছাড়া কে কোন দলের প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে ভোটাররাও চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন। নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ মেলাতে প্রচারনায় নেমে পড়েছে বড় বড় রাজনৈতিক দল এবং তাদের জোট সহযোগীরা। বসে নেই ছোট ছোট দলগুলিও। আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সমানতালে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারন ভোটারদের অভিনন্দন জানানো পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের অলিগলিতে

এ আসনে বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর কোনো একক দলের প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত মিসবাহ উদ্দীন খান এমপি হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির অধ্যক্ষ আবুল হাসানাত। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ও ২০০১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির আনম এহসানুল হক মিলন। পরে মিলনকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হন সাবেক আমলা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

আগামী নির্বাচনে এ আসনে বড় দুই দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা রয়েছে। আওয়ামী লীগে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিকল্প হিসেবে এলাকায় সফর রয়েছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন।

এদিকে এহসানুল হক মিলনের বিকল্প হিসেবে দু’জন প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ফলে বড় এই দুই দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। চূড়ান্ত মনোনয়নের আগে এই বিভ্রান্তি কতটুকু কাটবে তা বলার সময় এখনও আসেনি।জাতীয় পার্টিতেও নেই স্বস্তি সাবেক এমপি ও সাবেক চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ শহীদুল্লাহর পাশাপাশি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এমদাদুল হক রুমন। তারা দুই ভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এমপি হওয়ার আগেই ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনোক্রেট কোটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হন। পরে এমপি হওয়ার পর কচুয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেন তিনি। তার এই উন্নয়ন এখনও কচুয়াবাসীর মুখে মুখে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করছেন আগামী নির্বাচনে ড. মহীউদ্দীনেরই মনোনয়ন পাওয়া উচিত। ঢাকায় বসবাস করলেও প্রতি সপ্তাহেই তিনি এলাকায় আসছেন। অংশ নিচ্ছেন সভা সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে।

কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী বলেন- ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি হওয়ার পর অবহেলিত কচুয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আমার বিশ্বাস আগামীতে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং বিজয়ী হবেন।

অন্যদিকে তৃণমূল উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের পক্ষে সক্রিয়। তিনি সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় তিনি সক্রিয়। পাশাপাশি এলাকায় মহিলা কলেজ, হাসপাতালসহ বেশ কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রতি সপ্তাহে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সভা সমাবেশ, কর্মী সভা করে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলেও এলাকায় আলোচনা রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান হাতেমের সঙ্গে কথা বললে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তৃণমূল ও দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোলাম হোসেনকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশাবাদী। তবেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে।

সাবেক এনবিয়ার চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান- রাজনীতি হচ্ছে মানুষের সেবা করার অন্যতম মাধ্যম। তবে এলাকায় সামাজিক কাজ ও গরীব দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে আসলে নানান ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। তার পরও কাজ করে যাব। বিচার করবে জনগণ।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ.ন.ম. এহসানুল হক মিলন একাধিক মামলার আসামি হয়ে এখন বিদেশে রয়েছেন। তৃণমূল বিএনপির কিছু নেতা কর্মীরা বলছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলনের বিকল্প অন্য কেউ নেই।

তবে দলের দুর্দিনে ও মিলনের অনুপস্থিতিতে মালয়েশিয়া শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মাঠে নেমে পড়েছেন। তিনি নানাভাবে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন ভোটারদের কাছে। মোশাররফ হোসেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। দুর্দিনে কচুয়া বিএনপির সঙ্গে থাকায় তার প্রতি দলের অনেকেই সহানুভূতিশীল।

এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মো. হুমায়ুন কবির। সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তাকে জেলে যেতে হয়। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী আহম মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

কচুয়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক বলেন, দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের হয়ে কাজ করে আসছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে এবং মনোনয়ন পেলে আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, মোশাররফ ভাই দুর্দিনে দল ও নেতাকর্মীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি তিনিই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন।

এ ছাড়া এহসানুল হক মিলনের স্ত্রী, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নাজমুন নাহার বেবী, সাবেক এমপি প্রয়াত রফিকুল ইসলাম রনির স্ত্রী শামিমা আক্তার রনি, লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম মজুমদারও মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন।
একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে এহসানুল হক মিলন কোনো কারণে মনোনয়ন না পেলে তার স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী মনোনয়ন পেতে পারেন।

এই আসনে জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীরাও পিছিয়ে নেই সাবেক এমপি ও সাবেক চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ শহীদুল্লাহর পাশাপাশি উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক এমদাদুল হক রুমন।

একটি সূত্র বলছে, উপজেলা জাতীয় পার্টির আসনটি এমদাদুল হক রুমনের হাত ধরেই অনেকটা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পর এমদাদুল হক রুমনের উদ্যোগে কচুয়ার ১২টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে সম্মেলনে মাধ্যমে কমিটি হয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলার যুবসংহতি, ছাত্রসমাজ ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন ও ১১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০৫টিতে কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। জানতে চাইলে এমদাদুল হক রুমন জানান, চাঁদপুরের মধ্যে কুচয়ায় জাতীয় পার্টির অবস্থান সবচেয়ে ভালো।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের বৈরিতা ও অসহিষ্ণুতা ভোটারদের জাতীয় পার্টির প্রতি আকৃষ্ট করছে। বেড়েছে জনসমর্থনও। জাতীয় পার্টি যদি জোটগত নির্বাচন করে, তবে অবশ্যই এ আসনের দাবিদার জাতীয় পার্টি।

প্রসঙ্গত, কচুয়া উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে চাঁদপুর-১ আসন গঠিত। এ আসনে মোট গ্রাম ২৪৩ টি।যাদের মধ্যে মোট ভোটার সংখা ২ লক্ষ ৯ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৯ হাজার ৮৬৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৯ হাজার ৬২২ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *