fbpx

কেরালায় ১৯জন ব্রিটিশ পর্যটকককে এমিরেটসের বিমান থেকে টেনে নামানো হল

এমিরেটসের ফ্লাইট নাম্বার ইকে-৫৩১ রবিবার সকালে কোচি থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে ওড়ার জন্য তখন প্রস্তুত। প্রায় শতিনেক যাত্রীর সবাই বিমানে উঠে বসেছেন, এয়ারক্র্যাফটের দরজা বন্ধ করা হবে যে কোনও মুহুর্তে।

হঠাৎই ছুটতে ছুটতে বিমানের দরজায় এসে হাজির হলেন কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসনের একদল কর্মকর্তা, সঙ্গে বিমানবন্দর পুলিশের লোকজন।

তাদের কাছে খবর আছে, বিমানের যাত্রীদের মধ্যে একদল ব্রিটিশ পর্যটক আছেন – যার মধ্যে অন্তত একজন নিশ্চিতভাবেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে প্রমাণ মিলেছে।

এয়ারক্র্যাফটের ভেতর খুব সহজেই চিহ্নিত করা গেল ব্রিটিশ পর্যটকদের ১৯জনের ওই দলটিকে – আর পুলিশি পাহারায় তাদের ‘অফলোড’ করাও হল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।

যেহেতু বিমানের বাকিরাও তাদের সংস্পর্শে এসেছেন বেশ খানিকটা সময়, বিমানের ক্রু এবং বাকি ২৭০জন যাত্রীকেও নামিয়ে এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হল এয়ারপোর্টেই। 

তবে অন্য যাত্রীদের আর আটকে রাখা হয়নি, ব্রিটিশ ওই পর্যটক দলটিকে ভারতে রেখেই এমিরেটসের বিমানটি শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের সোয়া তিন ঘন্টা পর দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে করোনা ভাইরাস-আক্রান্ত একজন বিদেশি নাগরিক কীভাবে এমিরেটসের বিমানে উঠে বসতে পারলেন?

এই ব্রিটিশ পর্যটকদের দলটি ভারতে এসেছিলেন দিনকয়েক আগেই। কেরালার শৈলশহর মুন্নারের কাছে একটি হিল রিসর্টে ছুটি কাটাচ্ছিল গোটা দলটি।

 

ওই বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে একজনের মধ্যে হঠাৎ ভাইরাল ও ফ্লু-সদৃশ উপসর্গে আক্রান্ত হওয়ায় তার নমুনা করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বিধিমাফিক তাকে রাখা হয় কোয়ারেন্টিনেও।

এমন কী, কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মীরাও তাকে নজরদারিতে রাখতে শুরু করেন।

নিকটবর্তী দেবীকুলামের সাব-কালেক্টর প্রেম কৃষ্ণান বিবিসি বাংলাকে জানান, “স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা শনিবার রাত সাড়ে দশটা পর্যন্তও ওই রিসর্টেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু তখনও ওই ব্যক্তির করোনাভাইরাস টেস্টের রেজাল্ট আসেনি।”

“এদিন সকালে পরীক্ষার রেজাল্ট আসতেই দেখা যায় ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাস পজিটিভ। সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মীরা সাতসকালেই ওই রিসর্টে ছুটে যান – কিন্তু গিয়ে দেখেন ওই ব্যক্তি সেখানে নেই!”

আসলে তার দলের বাকি সদস্যদের ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার টিকিট ছিল এদিন সকালেই।

যেহেতু তাদের চলাফেরায় কোনও বিধিনিষেধ ছিল না, তারা ভোররাতে যথাসময়েই রিসর্ট থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।

কিন্তু কোয়ারেন্টিনে থাকা একমাত্র পর্যটকও সেই দলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। এয়ারপোর্টে পৌঁছে চেক-ইন করে, বোর্ডিং পাস নিয়ে ও ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করে উঠে বসেছিলেন দুবাইগামী বিমানেও।

‘পাখি খাঁচা ছেড়ে পালিয়েছে’, এটা বুঝতে পেরেই স্বাস্থ্যকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন কোচি বিমানবন্দরে।

তারপর প্রশাসন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে একেবারে শেষ মুহুর্তে আটকানো হয় এমিরেটসের বিমানটিকে, সেখান থেকে নামিয়ে আনা হয় ব্রিটিশ পর্যটকদের পুরো দলটিকেই।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় মাত্র একজন ব্রিটিশ নাগরিকের ভারতে থেকে যেতে হত – কিন্তু এখন তিনি প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ায় ১৯জনের পুরো দলটিকেই ভারতে আটকা পড়তে হল!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *