fbpx

‘আমার মা রে বাঁচাইতে পারিনি, কথা কইয়া কী অইব’

২০১৪ সালের ৪ আগস্ট পদ্মা নদীতে ডুবে যায় এমভি পিনাক-৬। লঞ্চটি ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের বহন করছিল।

পিনাক-৬ ট্র্যাজেডিতে বেঁচে যান ঢাকার ডেমরার গৃহবধূ বিউটি বেগম। নিখোঁজ হয় তার মেয়ে মীম (১৩)। যার খোঁজ মেলেনি চার বছরেও।

জানতে চাইলে বিউটি বলেন, ‘আমার মা রে (মেয়ে) বাঁচাইতে পারিনি, কথা কইয়া কী অইব’।

ডুবে যাওয়া লঞ্চে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের তিন ভাগ্নিও ছিলেন। তারা হলেন- জান্নাতুন নাঈম লাকি, নুসরাত জাহান হীরা (২০) ও ফাতেমা তুজ জোহরা স্বর্ণা (১৮)।

লঞ্চডুবিতে নিহত হীরার লাশ উদ্ধার করা হলেও বাকি দুই জন নিখোঁজ হন। হীরা ও স্বর্ণার বাবা নুরুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘চার বছরেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি।’

পিনাক-৬ ট্রাজেডি মামলার আসামিরা জামিনে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নুরুল ইসলাম মিয়া। তিনি এ দুর্ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন।

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর বেতকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আমানুল হকের নাতনি ইমা আক্তার। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি।

ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে পিনাক-৬ লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ হয় ইমা। টানা ৯ দিন খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানান আমানুল হক।

জানা যায়, ৮৫ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এমভি পিনাক-৬ লঞ্চটি প্রায় আড়াইশ’ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিল। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটের পদ্মা নদীতে মাওয়া ঘাটের অদূরে লঞ্চটি ডুবে যায়।

এ দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ হন ৬১ জন যাত্রী। প্রশাসনের নিখোঁজ তালিকায় ফরিদপুরের ২০, গোপালগঞ্জের ১২, মাদারীপুরের ১০, নারায়ণগঞ্জের পাঁচজন এবং শরীয়তপুর জেলার তিনজন রয়েছেন।

এ ছাড়া ঝালকাঠি, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর ও ঢাকার দুইজন করে এবং কক্সবাজার, নরসিংদী ও গাজীপুরের একজন করে রয়েছেন নিখোঁজ তালিকায়। নিহত ৪৯ জনের মধ্যে ২৮ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

অজ্ঞাত হিসেবে শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয় ২১ জনের মরদেহ। তাদের ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে চার বছরেও এসব লাশের পরিচয় মেলেনি।

এ ঘটনার পর সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে পরিবহন মন্ত্রণালয়। আর লৌহজং থানায় বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে চারটি মামলা করা হয়।

সে সময় লঞ্চের মালিক কালু মিয়া ও তার ছেলে লিমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এখন তারা জামিনে রয়েছেন।

দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার ও পরবর্তী সময়ে এক লাখ ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। তবে নিখোঁজ অর্ধশতাধিক পরিবারের কেউ পাননি এই অনুদান।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *