fbpx

বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন

১. সেনেগাল-ফ্রান্স (২০০২ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব ১ম ম্যাচ): 

২০০২ বিশ্বকাপে ফ্রান্স গিয়েছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। ২০০০ সালের ইউরোজয়ী দলও ছিল ফ্রান্স। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা ৩টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি ছিল তাঁদের সামনে। ২০০২ বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট এবং সেরা দলও ছিল ফ্রান্সের।

গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিল আফ্রিকান দেশ সেনেগাল। ধারে কিংবা ভারে সবদিক থেকেই সেনেগাল পিছিয়ে ছিল অনেক। সেই সেনেগালই ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয় ১-০ গোলে। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় অঘটন বলে বিবেচিত। ম্যাচের ৩০ মিনিটে পাপা দিওফ ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন। বিশ্বজয়ের মুকুট রক্ষা করতে এসে ইতিহাসের প্রথম রাউন্ডেই বাড়ির পথ ধরে ফ্রান্স।

ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল ক্যামেরুন। ফাইল ছবিম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল ক্যামেরুন।

২. ক্যামেরুন-আর্জেন্টিনা (১৯৯০ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব ১ম ম্যাচ):

সে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এসেছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। দলে ছিলেন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় ডিয়েগো ম্যারাডোনা। সেই আর্জেন্টিনাই কিনা গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে আফ্রিকান সিংহ খ্যাত ক্যামেরুনের কাছে। ম্যাচের শুরু থেকেই ক্যামেরুনের পরিকল্পনা ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে আটকানো।

যার ফলে ম্যারাডোনাকে ট্যাকল করে ক্যামেরুনের দুজন লাল কার্ড দেখেন। কিন্তু নয়জনের দল নিয়েই ম্যাচের ৬৭ মিনিটে ফ্রাঙ্কো ওমাম বিয়িকের গোল অঘটনের জন্ম দেয়। ক্যামেরুন কেবল গ্রুপ পর্বেই থেমে থাকেনি, কোয়ার্টার ফাইনালও খেলেছিল তাঁরা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ক্যামেরুনের জয়টিকে বিশ্বকাপে আফ্রিকান কোনো দলের সেরা মুহূর্ত বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।

বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে এসেই বড় ‘মাছ’ শিকার করেছিল উত্তর কোরিয়া। ফাইল ছবিবিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে এসেই বড় ‘মাছ’ শিকার করেছিল উত্তর কোরিয়া।

৩. উত্তর কোরিয়া-ইতালি (১৯৬৬ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব ৩য় ম্যাচ):

ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই গিয়েছিল ইতালি। গ্রুপে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিলি এবং উত্তর কোরিয়া। একমাত্র এশিয়ান দল হিসেবে সেবার বিশ্বকাপে খেলেছিল উত্তর কোরিয়া।

গ্রুপ পর্বের ২ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট দাঁড়ায় ইতালি ২, উত্তর কোরিয়া ১। পরের রাউন্ডে যেতে ইতালির ড্র হলেই যথেষ্ট, জিততেই হতো কোরিয়াকে। তবে সে আশা স্বয়ং কোনো উত্তর কোরিয়ানও বোধ হয় করেননি। ম্যাচের ৪২ মিনিটে পাক দু ইকের গোল লিড এনে দেয় উত্তর কোরিয়াকে। বাকি সময় সেটি ধরে রেখে বিশ্বকাপেরই অন্যতম সেরা অঘটনের জন্ম দেয় তাঁরা। প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে ইতালি।

যে ম্যাচের স্কোরলাইন বিশ্বাস হয়নি বলে ইংল্যান্ডকে ১০-১ ব্যবধানে বিজয়ী লিখেছিল ইংলিশ সংবাদমাধ্যম। ফাইল ছবিযে ম্যাচের স্কোরলাইন বিশ্বাস হয়নি বলে ইংল্যান্ডকে ১০-১ ব্যবধানে বিজয়ী লিখেছিল ইংলিশ সংবাদমাধ্যম। 

৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ড (১৯৫০ বিশ্বকাপ, গ্রুপ পর্ব ২য় ম্যাচ) :

১৯৫০ বিশ্বকাপে শৌখিন দল পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপ আর দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল পরাশক্তিদের বিপক্ষে লড়াই করতে পারবে না বলেই ভেবেছিল তাঁরা। গ্রুপ পর্বের ১ম ম্যাচে স্পেনের কাছে ৩-১ গোলের হার।

২য় ম্যাচে তাঁরা মুখোমুখি ইংল্যান্ডের। তখন স্বীকৃতভাবেই বিশ্বের সেরা দল ইংল্যান্ড। সেই দলকেই কিনা ফুটবলের শৌখিন দলটি হারিয়ে দেয় ১-০ গোলে! ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটেই ইংল্যান্ড গোলমুখে ৬টি শট নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপার ফ্র্যাংক বোরগি অসাধারণ কয়েকটি সেভ করেন। ৩৭ মিনিটে জো গাটজেনস এর গোলই ম্যাচের একমাত্র গোল হিসেবে রয়ে যায়।

ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরাও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে এমনটি ঘটেছে। প্রতি গ্রুপ থেকে মাত্র একটি দল পরের পর্বে যেতে পারত বিধায় ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। পরের ৪০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।

নিজেদের মাঠে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হার জার্মানির। ফাইল ছবিনিজেদের মাঠে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হার জার্মানির।

৫. জার্মানি-ব্রাজিল (২০১৪ বিশ্বকাপ, সেমি-ফাইনাল):

এক ধাপ পেরোলেই নিজেদের আঙিনায় বিশ্বকাপ ফাইনাল! এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কিছু হতে পারে না। ব্রাজিলের সামনেও সেদিন এসেছিল এই সুযোগ। প্রতিপক্ষ জার্মানি। যদিও দলের প্রাণভোমরা নেইমার এবং অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাকে ছাড়াই খেলতে নামে ব্রাজিল।

তবুও তাঁদের সমর্থকেরা মাঠে এসেছিলেন দারুণ কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে। প্রথম ১০ মিনিট দুই দলই ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে। এরপরই কর্নার থেকে টমাস মুলারের গোল যেন বাঁধ ভেঙে দেয়। এরপর ২৩ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসার ইতিহাস গড়া গোল (বিশ্বকাপে এক খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বেশি গোল), ২৯ মিনিটে স্যামি খেদিরার গোল। এই ৬ মিনিটে যেন সুনামি বয়ে যায় ব্রাজিলের ওপর দিয়ে।

এই সময়ের মধ্যেই গোল হয় ৪টি! অর্থাৎ ৩০ মিনিটেই জার্মানি এগিয়ে যায় ৫-০ গোলে! এরপর দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি গোল করে জার্মানরা। ম্যাচের ৯০ মিনিটে অস্কারের গোল ব্রাজিলিয়ানদের কষ্ট বাড়িয়েছিল কেবল। ১৯৫০ এর মারাকানাজোর পর আরেকবার নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ থেকে কান্না নিয়ে বিদায় নেয় ব্রাজিল। যা ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ইতিহাসেরই সবচেয়ে বাজে পরাজয়।
এই ম্যাচটির প্রেক্ষাপট অন্য ম্যাচগুলোর মতো নয়। সেমিফাইনালের মতো জায়গায় জার্মানি-ব্রাজিল ম্যাচে জিততে পারে যে কেউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *